রায় এবং ডিক্রি ও আদেশের সাথে সম্পর্ক
রায় এবং ডিক্রি ও আদেশের সাথে সম্পর্ক
হতেই পারে আপনি আইন আদালত বিষয়ে নতুন বা এখনো আইনের ছাত্র হিসেবে ঠিক পাকা হয়ে উঠতে পারেননি কিন্তু আপনি আছেন ঘোর কনফিউশনে, আর কনফিউশনের বিষয় হোল দেওয়ানী আদালতের ডিক্রি, আদেশ এবং রায় নিয়ে [Decree, Order and Judgment]। নিশ্চয়ই ভাবছেন এতগুলো কেন এবং এদের মধ্যে পার্থক্যই বা কি? আর আপিল, রিভিউ ও রিভিশনের কনফিউসনতো আছেই।
চলুন দেখা যাক, ডিক্রি, আদেশ এবং রায়ের বিস্তারিত, আপিল, রিভিউ ও রিভিশন ইত্যাদি।
১. ডিক্রি ও ২. আদেশ এই দুইটি বিষয় বুঝতে হলে আমাদের মোটামুটি রায় সম্পর্কে একটু ধরানা থাকতে হবে। তাই আমরা পুরো বিষয়টি একটু একনজরে দেখে নেই।
কোন বিষয় যখন আদালতের নিকট পেশ করা হয়, আদালত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার আগে কিছু ব্যবস্থা নেন, যেমন: অভিযুক্ত পক্ষকে ডাকা, তাদের অভিযোগটি দেওয়া এবং তাদের মন্তব্য/ উত্তর নেওয়া, কোন কোন বিষয়টি বিচার করবে ইত্যাদি নির্ধারন করা। এরপর আসে মূল বিচার প্রক্রিয়া যেখানে সাক্ষ্য প্রমান নেওয়া হয় এবং সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে রায় ঘোসনা করে।
আবার আদালত রায় ঘোসনা করার আগেই কোন প্রয়োজনে কিছু আদেশ প্রদান করতে পারে। ধরা যাক, রহিম একটি জমি দখল করে আছে, এখানে জমিটি করিমের বলে করিমের দাবি, তবে জমিটি কার সেই উত্তরে পৌছানোর আগেই আদালত রহিমকে জমিটি দখল মুক্ত করে দেওয়ার জন্য আদেশ দিল। এখানে কারো মালিকানা সম্পর্কে কোন রায় আদালত ঘোসনা করেন নি তাই এই আদেশটি চূড়ান্ত ভাবে কারো অধীকার সম্পর্কে ঘোসনা দেয় না। এটি হচ্ছে একটি আদেশ [Order]
কিন্তু বিষয়টি একটু অন্য ভাবেও হতে পারে, যেমন ধরুন, আদালত সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে এই রায় দিল যে জমিটি করিমের তখন এটি একটি চূড়ান্ত ঘোসনা যা কোন করিমের অধিকার সম্পর্কে নিশ্চিত করে তাকে ঐ জমির অধিকারী করে, তাই এটি একটি ডিক্রি [Decree]। আদালত অধীকার ঘোসনার সাথে সাথে এই আদেশও দেয় যে রহিমকে জমিটি ছেড়ে দিতে হবে।
রায় [Judgment]
এখানে আমরা একটি রায়ের মাধ্যমে দুটি বিষয়ই পেলাম ১. ডিক্রি ২. অর্ডার। রায়ে কেন ডিক্রিটি বা অর্ডারটি প্রদান করা হোল, কোন দলিলের বা সাক্ষ্যের বা আইনের ভিত্তিতে এসব ও উল্লেখ করেন যা পড়ে আমরা পুরো বিচার প্রক্রিয়াটা বুঝতে পারি, এই বাকি কথা গুলো সহ পুরো বিষয়টাকে বলে রায় বা Judgment.
সজ্ঞায়ন: দেওয়ান কার্যবিধি ২(৯) ধারায় বলা হয়েছে,
ডিক্রি বা আদেশের কারন হিসেবে আদালত যে মন্তব্য করেন তাই হচ্ছে রায়।
- মামলার শুনানি সমাপ্ত হবার পর সাথে সাথে অথবা ৭ দিনের মধ্যে আদালত রায় প্রাদান করবে। (আদেশ ২০, বিধি ১)
তাহলে আমরা বুঝলাম রায় আগে দেয় তারপর ডিক্রি এবং/বা অর্ডার দেয় (ধারা ৩৩) । এখন রায়ের আবার দুটি অংশ থাকে।
- Ratio Decidendi; যেখানে ডিক্রিটি কেন দেওয়া হল তা ব্যাখ্যা করা থাকে এবং নির্দেশনা থাকে যা যথাযথ কতৃপক্ষ মানতে বাধ্য।
- Obiter Dictum; এ অংশটুকু বিচারকের মতামত এবং গাইড লাইন এর মতন। এই অংশ কোন কর্তৃপক্ষ মানতে বাধ্য নন। তবে সাধারনত মানতে চেষ্টা করা হয়।
যদিও ডিক্রি ও অর্ডার প্রাথমিক ভাবে বোঝা বেশ সহজ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কাজের সময় এগুলো বেশ এলোমেলো মনে হয়, তখন কোনটি ডিক্রি এবং কোনটি অদেশ তা বোঝাটা একটু কষ্টসাধ্য বটে কিন্তু কাজের প্রয়োজনে যা খুবই গুরুত্বপূর্ন, তাই আমরা এখন (পরবর্তী লেসনে) ডিক্রি এবং আদেশের কিছু টেকনিক্যাল বিষয় জানবো।